পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয়েছে। নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে সুদের হার হ্রাস করা হয়। বিভিন্ন মেয়াদে দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে দশমিক ৯৬ শতাংশ পর্যনত্ম সুদের হার কমানো হয়েছে। সুদের হার হ্রাস করাসহ নীতিমালা সংশোধন করে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যনত্মরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের দশ মাসে সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রি লৰ্যমাত্রার চেয়ে তিনগুণ বেড়েছে। জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের কর্মকর্তা মুর্শিদা খান জনকণ্ঠকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারের সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রির লৰ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। কিন্তু জুলাই থেকে এপ্রিল এই দশ মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকার উপরে। তিনি আরও বলেন, অর্থবছরের শেষ পর্যায়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি রেকর্ড সৃষ্টি করবে।
এদিকে পরিবার সঞ্চয়পত্র চালুর পর গৃহিণীরা ঝুঁকে পড়েছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক নারী প্রথম দিনেই পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন। সঞ্চয়পত্র বু্যরো, ডাকঘর ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় গিয়ে অনেকে পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনেন।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের অধীনে বর্তমানে ছয় ধরনের সঞ্চয়পত্র ইসু্য করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অনত্মর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, বাংলাদেশ প্রাইজ বন্ড, ডাকঘর সঞ্চয়পত্র, জাতীয় বিনিয়োগ বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। সূত্র মতে, পরিবার সঞ্চয় পত্র চালু করার আগে পরিবার সঞ্চয় পত্র নীতিমালা ২০০৯ জারি করা হয়। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর ওই নীতিমালা প্রথম বছরের জন্য ৮ শতাংশ হারে সুদ আরোপ করে। দ্বিতীয় বছরের জন্য ৯ শতাংশ, তৃতীয় বছরের জন্য ১০ শতাংশ, চতুর্থ বছরের জন্য ১১ শতাংশ ও পঞ্চম বছরের জন্য ১২ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করা হয়। একজন ব্যক্তি সবের্াচ্চ ১০ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন।
কিন্তু ২১ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে সবের্াচ্চ ক্রয়সীমা দশ লাখ টাকার স্থলে ৩০ লাখ টাকা করা হয়। প্রথম বছরের সুদের হারে কোন পরিবর্তন করা হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় বছরের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮.৭৫ শতাংশ, তৃতীয় বছরের জন্য ১০ শতাংশ থেকে সুদের হার কমিয়ে ৯.৫০ শতাংশ, চতুর্থ বছরে ১১ শতাংশ থেকে সুদের হার কমিয়ে ১০.২৫ শতাংশ এবং পঞ্চম বছরে ১২ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১১.০৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ শুধু পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দ্বিতীয় বছরের জন্য দশমিক ২৫ শতাংশ, তৃতীয় বছরের জন্য দশমিক ৫০ শতাংশ, চতুর্থ বছরের জন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ ও পঞ্চম বছরের জন্য সুদের হার হ্রাস করা হয় দশমিক ৯৬ শতাংশ।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে প্রথম পরিবার সঞ্চয়পত্র চালুর পর ৫ বছর মেয়াদে পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ছিল ১৩.২০ শতাংশ। পরর্বতীতে ২০০১ সালে সুদের হার কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১১.৯২ শতাংশ এবং ২০১০ সালে সর্বশেষ এর সুদের হার দাঁড়াল ১১.০৪ শতাংশ।
এদিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের জন্য মানুষ ঝুঁকে পড়েছে। সরকারের পুরো বছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি লৰ্যমাত্রার তিনগুণ অতিক্রম করেছে প্রথম দশ মাসে। লৰ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। ফলে এই বিশাল অঙ্কের সঞ্চয়পত্রের সুদ গুনতে গিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছে সরকার। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৩৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের দশ মাসে ৯ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। ব্যাংক সুদের হার কম ও পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থার অভাবে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকে সাধারণ মানুষ নিরাপদ মনে করছেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস